Tuesday, March 26, 2019

অন্য চোখ শেষপর্ব

0 comments

‘বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার জন্যই আজ তোমার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’ কান্নার মাঝে থেমে থেমে বলল নীলিমা।
অন্যদের কথা জানি না। নীলিমার কথা শুনে আমার ধাক্কা মতন লেগেছে। লাগবেই বা না কেন? ঘটনা যে এখন অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। আমি তো এখন সম্পূর্ণ দায়মুক্ত। ডা. মানষনেত্রের যদি মালটিপল পারসনালিটি থেকে থাকে তিনিও অপরাধী সাব্যস্ত হবেন না। কিন্তু এখন তো অন্য ঘটনা ঘটে গেল! ডা. মানষনেত্রের গবেষণা ও উদ্ভাবন চুরি হয়েছে। আর নীলিমা, তার নিজের মেয়েই কিনা এটার দায় নিজের কাঁধে নিচ্ছে!
মানষনেত্রও বোধহয় আমার মতো অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
-কী বলতে চাচ্ছিস? খুলে বলতো।
কান্না থামিয়ে নীলিমা বলল,
-আমি আর নাইম একে অপরকে খুব ভালোবাসি। প্রায় তিনমাস হচ্ছে আমাদের সম্পর্কের। সে তো আমার জন্য পাগলপ্রায়। একদিন সে বলল, আমাকে না দেখলে রাতে নাকি তার ঘুম হয় না। সে আমাকে এমনভাবে কনভিন্স করলো যে আমি তাকে প্রায় প্রতিরাতে বাসার ভেতরে ঢুকতে দিতাম। সবাই তখন ঘুমিয়ে থাকতো। আর তুমি ল্যাবে কাজ করতে। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলতাম। সে তোমার কথাও জিজ্ঞেস করতো। আমি বলতাম তুমি ল্যাবে কাউকে ঢুকতে দাও না। কিন্তু নাইম আমাকে আমাকে কনভিন্স করে ছাড়লো। তার নাকি খুব শখ ল্যাবের ভেতরটা দেখা। তাছাড়া সে সরকারী মেডিকেলে ডাক্তারি পড়ছে। তোমার ল্যাব থেকে নাকি অনেক কিছু শিখতে পারবে। তাই একদিন তোমার ল্যাবের চাবি চুরি করে নাঈমকে দিয়েছিলাম। সেটা থেকে সে আরেকটা নকল চাবি বানিয়ে নিয়েছিল। তখন তুমি থাইল্যান্ডে। সে প্রায়ই প্রতিদিন তোমার ল্যাবে ঢুকতো। আমিও থাকতাম সাথে। কিন্তু তার অভিসন্ধি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি আমাকে। এখন বুঝতে পারছি…
নীলিমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ডা. মানষনেত্র কষে চড় লাগালেন ওর মুখে। আমি নীলিমাকে আর সাদাত আঙ্কেল ওর বাবাকে ধরে ফেললেন। নীলিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মানষনেত্র সমানে বকে যাচ্ছেন। সাদাত আঙ্কেল বললেন,
-আপনারও দোষ কম নয় দাদা। আপনি এত মূল্যবান ফাইলগুলো ল্যাবের এক কোণায় ফেলে রেখেছিলেন কেন? চুরি নাহলেও ইঁদুর ঠিকই কেটে কুচি কুচি করতো।
-ওগুলো ওখানে রেখেছি, কারণ আমি জানতাম যে কোন সময় ওগুলো চুরি হতে পারে। তাই ল্যাবের কোণায় ফেলে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম অপ্রয়োজনীয় জিনিস মনে করে কেউ ওখানে খুঁজতে যাবে না। কিন্তু শয়তান ছেলেটা ঠিকই খুঁজে বের করেছে। নিশ্চয়ই আগে অন্য সব জায়গায় খুঁজেছিল।
ওসি সাহেব বললেন,
-আপনারা অস্থির হবেন না। নাদের আলী এখনও হাসপাতালে। তার ছেলেরা নিশ্চয়ই বাবাকে দেখতে যাবে। ওখানে আমাদের পুলিশ আছে। আমি বলে দিচ্ছি দেখা মাত্রই যেন ওদের গ্রেফতার করা হয়।
তারপর আমার উদ্দেশ্যে বলল,
-আপনার ওপর অনেক ধকল গেছে। এখন বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিন। পরে আপনাকে ডেকে নিয়ে কিছু ফর্মালিটিজ পূরণ করে নিব।
আমি আর সাদাত আঙ্কেল বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আঙ্কেল গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি তার পাশে বসেছি। গাড়ি ছুটে চলেছে আর আমি চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছি৷ এই তিনদিনে কত কিছু ঘটে গেছে। সবকিছুর জন্য কে দায়ী? ডাঃ মানষনেত্র? নাকি নীলিমা?
আঙ্কেলের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম,
-কী ভাবছো?
-ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবছি। এখনও অনেক কিছু অমীমাংসিত।
-কিছুই অমীমাংসিত নেই আর। মানষনেত্রের অন্য সত্ত্বাটাই সুলোচনা আর নীলিমাকে হিপনোটাইজ করতো। আর তোদের সাথেও একই কাজ করেছে। তার ঐ সত্ত্বাটা সুলোচনাকে বেঈমান মনে করতো। দিবাকরও ওর কল্পনার সৃষ্টি। এজন্য নিজের ঔরষজাত সন্তানকেও অবৈধ ভাবতো। সব অঘটন তার রোগের কারণেই ঘটেছে। মাল্টিপল পারসোনালিটিতে একসাথে দুই, তিন বা অনেক সত্তা থাকতে পারে। ভালো, খারাপ, বিপজ্জনক যে কোন রকম হতে পারে। মানষনেত্রের দ্বিতীয় সত্তাটা সন্দেহপ্রবণ ও মন্দ চরিত্রের।
-এই রোগটা কেন হয় আঙ্কেল? আর এর থেকে মুক্তির কি কোন উপায় নেই?
-অনেক সময় হতাশা, অপ্রাপ্তি, আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে মানসিক চাপ থেকে এই রোগটার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা বলতে, ডিপ কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। মস্তিষ্কের প্রশান্তির জন্য কিছু মেডিসিন আছে। সেগুলোও কাউন্সেলিং এর সময় দেয়া হয়।
কথা বলতে বলতে বাসার সামনে চলে এসেছি। আমি সাবিহাকে দেখতে যেতে চাইলাম। আঙ্কেল বললেন,
-আগে বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। সবাই অস্থির হয়ে আছে তোমার জন্য। সাবিহাও এখন ভালো আছে। আজকে এগারোটায় রিলিজ দেবে। এইতো আর কিছুক্ষণ পর। এখন তো সকাল আটটা বেজে গেছে। তুমি একেবারে বাসায় গিয়ে দেখে এসো। ঠিক আছে?
আমি সায় দিলাম। আঙ্কেল হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমি তাকে বিদায় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করলাম।
তিনদিন পর.........
খুব সুন্দর একটা সকাল। গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে চিকচিক করছে সোনালী রোদ। পাখিরা থেমে থেমে গান গাইছে। হালকা শীতল বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের তিনজনকে। আমি, সাবিহা আর নীলিমা। আমরা পার্কে বসে আছি। নীলিমা সাবিহার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলল,
-এখন কেমন আছো সাবিহা?
-ভালো। পেটের সেলাইটা গতকাল ড্রেসিং করে এসেছি। ওখানে একটু ব্যথা আছে।
আমি বললাম,
-মাত্র ছয়দিনে ক্ষত শুকায় নাকি? তোর রেস্ট নেয়া উচিত ছিল। কে বলেছে পার্কে আসতে?
সাবিহা হেসে বলল,
-রেস্ট নিতে নিতে আমি ক্লান্ত। তোকেও দেখতে ইচ্ছে করছিল। বাসায় বললে তো আসতে দিত না। তাই এই সাত সকালে কাউকে না বলে চুপিচুপি চলে এসেছি। জানতাম তোকে এখানে পাবো। আর আমার তো এই সুন্দর প্রকৃতি দেখে শরীর, মন সব ফুরফুরে লাগছে।
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
-খুব খারাপ করেছিস তুই। আমি তো তোকে দেখতে যেতামই। গতকালও তো গিয়েছি।
নীলিমা মন খারাপ করে বলল,
-আমার জন্য তোমাদের কতো সমস্যা হলো! সাবিহাও অনেক কষ্ট ভোগ করছে। আমি কী বলে যে তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো…
-এই নিয়ে কয়বার সরি বলেছো হিসাব আছে? আরেকবার সরি বললে কিন্তু খুব খারাপ হবে। চোখ রাঙিয়ে বললাম আমি।
নীলিমা লাজুক হেসে বলল,
-আচ্ছা আর সরি বলব না…
বলেই জিব কামড়ালো। আমরা তিনজনেই একসাথে হেসে উঠলাম। তখনই আমার মোবাইলে কল এলো। ওসি কামরুজ্জামান সাহেব ফোন করেছেন। কী বলবেন আবার কে জানে!

ওদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে ফোনটা রিসিভ করলাম,
-হ্যালো।
ওপাশ থেকে ওসি সাহেব অমায়িক কণ্ঠে বললেন,
-কেমন আছেন? সকাল সকাল বিরক্ত করলাম না তো?
-না না। আমার সকালে উঠার অভ্যাস আছে। তো কী খবর?
-খবর তো খুবই চমকপ্রদ।
আমি মনে মনে উৎকণ্ঠিত হলাম। মুখে সেটা প্রকাশ না করে বললাম,
-তাই নাকি! কী খবর বলুন তো।
-ডা. মানষনেত্রের মালটিপল পারসনালিটি ডিসঅর্ডার নেই। তিনি একেবারে সুস্থ মানুষ।
খুবই অবাক লাগল কথাটা শুনে। বললাম,
-তারমানে তিনিই কালপ্রিট? আমার আর সাবিহার সাথে যা করেছেন স্বজ্ঞানে করেছেন?
ওসি সাহেব দ্রুত বললেন,
-না না। তিনি নির্দোষ। হয়েছে কি, ঐ নাঈম ছেলেটাই করেছে সব। কিন্তু অন্য একজনের নির্দেশে।
আমি ব্যাকুল হয়ে বললাম,
-দয়া করে সব খুলে বলুন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
তিনি বলতে শুরু করলেন,
-নাঈম যে মেডিকেল কলেজে পড়ে তার চক্ষুরোগ ডিপার্টমেন্টের হেড ডা. মান্নান ভূইয়ার সাথে মানষনেত্রের পুরনো শত্রুতা ছিল। তিনি যখন জানতে পারেন নাঈমের বাবা মানষনেত্রের বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করে তখনই প্ল্যান তৈরি করেন। যদি নাঈম তার কথামতো কাজ করে তাহলে তার পড়ালেখার সব খরচ তিনি নিজে বহন করবেন। আর এফসিপিএস, এফআরসিএস এর মতো বড় বড় ডিগ্রিগুলো অর্জনের জন্য নাঈমকে তিনিই দেশের বাইরে পাঠাবেন। তার বাবার পক্ষে এই খরচগুলো করা সম্ভব না। তাই সে ডা. ভূইয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়।
ডা. ভূইয়া প্রথমে নীলিমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে বলেন। এভাবে নাঈম নীলিমার মাধ্যমে ল্যাব পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়। ল্যাবে কী কাজ হয় নাহয় সব খবর সে ডা. ভূইয়াকে জানাতো। এরপর তিনি নাঈমকে বলেন সে যেন মানষনেত্রের কাছ থেকে কৃত্রিম চোখ আর গবেষণার ফাইলগুলো এনে দেয়। কাজটা সে সহজেই করতে পারতো। কিন্তু মানষনেত্রের তখন থানা পুলিশ করে ঝামেলা করার সম্ভাবনা ছিল। তাই ওরা দুজন মিলে ডা. মানষনেত্রকে হিপনোটাইজ করে।

এ পর্যায়ে আমি চমকে ওঠলাম,
-কী! ডাঃ মানষনেত্রকে হিপনোটাইজ করেছে! এটা কীভাবে সম্ভব!
-হ্যাঁ এটাই সম্ভব হয়েছে। নাঈম নিজের মুখে স্বীকার করেছে সব। একদিন বিকেলে সাধারণভাবে মানষনেত্রের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তখনই করেছে এসব। ড্রইংরুমে হিপনোটাইজ লাইটটাও নাকি সেই লাগিয়েছিল। তারপর, মিসেস রায়, নীলিমা,‌ সাবিহা ও আপনাকে ডা. মানষনেত্র হিপনোটাইজ করেছে নাঈমের নির্দেশে। তিনি যা যা করতেন সম্মোহিত অবস্থাতেই করতেন। সম্মোহনভাব কেটে গেলে আর কিছুই মনে থাকতো না তার। ভাগ্যিস তিনি ল্যাবে গোপন ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন। নাহয় তাকে অসুস্থ মনে করে সব দোষ তার ওপরই চাপানো হতো। কৃত্রিম চোখগুলোও কে চুরি করেছে সেটাও এত সহজে জানতে পারতাম না। দেখা যেত মানষনেত্র মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন আর ডা. ভূঁইয়া কৃত্রিম চোখের উদ্ভাবক হয়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন।
ওসি সাহেব থামলেন। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না নাঈম কীভাবে এত বড় একজন ডাক্তারকে সম্মোহিত করেছে। কথাটা বলেই ফেললাম। ওসি সাহেব বললেন,
-নাঈম বলল, আত্মভোলা ও দূর্বল মনের মানুষকে নাকি সহজেই হিপনোটাইজ করা যায়। যাক সব ভালোই ভালোই চুকে গেছে। গতরাতেই আমরা ডা. ভূইয়াকে অ্যারেস্ট করেছি। এখন বাকী জীবন জেল হাজতে বসে বসে ডাক্তারি করতে পারবে। আর নাদের আলী, নাঈম, নাহিদ এদেরও আশা করি ভালো রকম শাস্তি হবে। এরাও ভূইয়ার ষড়যন্ত্রের সহযোগী ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-ডা. মানষনেত্র জানেন এসব?
-এখনও না। তার জিনিসগুলো ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে সামনাসামনিই বলব। তার ঐ অদ্ভুত রোগটা নেই জানলে তিনিও খুশি হবেন।

ফোন কেটে দিয়ে সাবিহা আর নীলিনার কাছে ফিরে গেলাম। ওরা দুজন একমনে গল্প করছে। নীলিমার মুখে হাসি। ওর জন্য খুব খারাপ লাগছে আমার। মেয়েটা যখন জানবে তার একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তার মায়ের প্রাণ গেছে, এত অঘটন ঘটেছে তখন সে নিজেকে অপরাধী ভাববে। আত্মগ্লানীতে ভুগবে। যাকে ভালোবেসেছে সেই এত বড় ধোঁকা দিয়েছে এটা মানতে কষ্ট হবে ওর। নাঈম আসলে ওকে কখনও ভালোবাসেনি। স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভালোবাসার টোপ ফেলেছিল। নীলিমা সেটা বুঝতে পারেনি। তার অসাবধানতায় এত বড় অঘটন ঘটে গেছে। এ কারণেই হয়তো বলে, ‘ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়।’
আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলিমা জিজ্ঞেস করে,
-কে ফোন করেছিল?
-ওসি সাহেব।
-কী বলেছেন? খারাপ কিছু না তো?
মনে মনে বললাম, খারাপ আর কী হবে? যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। মুখে বললাম,
-তোমাদের বাসায় যাচ্ছেন।
নীলিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-তাহলে তো আমাকেও যেতে হয়। তোমরাও এসো না আমার সাথে।
-আজ না। সাবিহা পুরোপুরি সুস্থ হলে তখন যাব। আর ফোনে যোগাযোগ তো হবেই।
নীলিমা চলে গেছে। একটু পরেই ওদের বাসায় বড় ধরনের একটা ঝড় উঠবে। সেটা ওর নিজেরই সামাল দেয়া উচিত। ওর ভুলটা ওকে বুঝতে হবে। আর শিক্ষা নিতে হবে। যদিও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে ওদের।
-কীরে কী ভাবছিস?
সাবিহার প্রশ্নে স্বম্বিৎ ফিরে পেলাম। তারপর বললাম,
-চল তোকে বাসায় পৌঁছে দিই।
-হুম চল। কিন্তু তোর মনে কী চলছে সেটা তো বলছিস না।
আমি দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললাম,
-এ কয়দিন ভেবে চলেছিলাম, এত সব ঘটনার পেছনে কে দায়ী হতে পারে। আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হবে নীলিমার বাবার রোগটার জন্যই এতকিছু হয়েছে। আবার এটাও ঠিক নীলিমা নাঈমকে অন্ধ বিশ্বাস করেছে বলে তার বাবার এতদিনের পরিশ্রম চুরি হয়েছে। কিন্তু ওসি সাহেবের ফোন আসার পর বুঝতে পারলাম আসলে সবকিছুর জন্য দায়ী একজনই।
-কে?
-নীলিমা।
-নীলিমা!
সাবিহা বিস্ময় গোপন করতে পারল না। আমি বুঝিয়ে বললাম,
-আমরা মানুষ দেখে চিনতে পারি না, সে কেমন, তার অভিসন্ধি কী। কারণ আমরা একটা মানুষকে বাহ্যিক দৃষ্টি দিয়ে দেখি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাদের বাহ্যিক দুটো চোখ ছাড়াও অন্য একটা চোখ দিয়েছেন। সেটাকে আমরা সিক্সথ সেন্স বলতে পারি, দূরদৃষ্টি বলতে পারি অথবা মনের শক্তি বলতে পারি। এটাকে কাজে লাগিয়েই বুঝতে হবে কে কেমন, কার মনে কী চলছে।
নীলিমা নাঈমকে খুব সহজে বিশ্বাস করে ফেলেছিল। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি, সে যদি তার অন্যচোখটা খোলা রাখতো তাহলে নাঈমের চালচলন, কথাবার্তাতে অসংগতি ধরতে পারতো। ছেলেটার দূরভিসন্ধিও বুঝতে পারতো। মনে চক্রান্ত নিয়ে কেউই স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। নীলিমা ঠিকই কিছু না কিছু আন্দাজ করতে পারতো। তখন হয়তো ওর মাকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। ওদের সবাইকেও এত কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হতো না।

সাবিহা আমার দিকে হাঁ করে চেয়ে আছে। আমি ওর মুখে হালকা চাপড় দিয়ে বললাম,
-কীরে, কী দেখছিস এমন করে?
-আসলে আমি অবাক হয়ে গেছি। তুই এত সুন্দর করে কথা বলতে পারিস আগে তো জানতাম না!
-আগে আমিও অনেক কিছু জানতাম না, বুঝতাম না। এখন নীলিমার ঘটনাটা দেখে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সাবিহা মাথা দুলিয়ে দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল,
-তারমানে তোর অন্যচোখটা খুলে গেছে!
আমিও কৃত্রিম ভাব দেখিয়ে গম্ভীর স্বরে বললাম,
-ঠিক তাই।
তারপর দুজনেই একসাথে হেসে উঠলাম। সব জটিলতা ও খারাপগুলোকে এড়িয়ে চলতে পারলে বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্ত আসলেই খুব সুন্দর।

লেখাঃ সালসাবিলা নকি

No comments:

Post a Comment

Thanks for your careful comment.